কক্সবাংলা ডটকম(১০ জুলাই) :: গণমাধ্যমকে যতটা স্বাধীনতা আওয়ামী লীগ সরকার দিয়েছে, তা আর কেউ কখনো ভোগ করেনি বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয় এমন সংবাদ প্রকাশ ও প্রচার না করতে সাংবাদিকদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। সাংবাদিকদের পেশাগত দক্ষতা বাড়ানোর পরামর্শ দিয়ে সরকারপ্রধান বলেছেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকার কারণে গত ১৪ বছরে সংবাদমাধ্যম ‘সবচেয়ে বেশি’ স্বাধীনতা পেয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, স্বাধীনতা উপভোগ করার অধিকার সবার আছে। তবে গণমাধ্যমকে দায়িত্বশীল হতে হবে। কর্তব্যপরায়ণতা দেখাতে হবে। গতকাল সোমবার প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের করবী হলে, অসুস্থ, অসচ্ছল সাংবাদিক এবং নিহত সাংবাদিক পরিবারের সদস্যদের মধ্যে অনুদানের চেক বিতরণকালে এ কথা বলেন তিনি।
গণমাধ্যমকর্মীদের জন্য সরকারের নানা উদ্যোগের কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ইতোমধ্যে আমরা একটা ওয়েজবোর্ড কার্যকর করেছি। ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় কর্মরত সাংবাদিকদের ওয়েজবোর্ডের আওতায় আনা হবে, খুব দ্রুত এটা বাস্তবায়ন করা হবে। গণমাধ্যমকর্মী চাকরি শর্তাবলি আইন সেটাও আমরা করে দেব। সাংবাদিকদের দেশের ভালোর জন্য সমালোচনা করার আহ্বান রেখে প্রধানমন্ত্রী বলেন১র ক্ষতির জন্য না হয়। সমালোচনা থেকে যদি কোনো কিছু সংশোধন করা লাগে আমরা তা করে নেব এবং আমরা তা করে থাকি। সেখানে আপনাদেরও দায়িত্ব আছে। স্বাধীনতা ভোগ করবেন, সঙ্গে দায়িত্ববোধও থাকতে হবে। দেশ ও জাতির জন্য কর্তব্যবোধ থাকতে হবে।
তিনি বলেন, আপনারা এমন কোনো সংবাদ প্রকাশ করবেন না, যা দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করে এবং এর চলমান অগ্রযাত্রা বাধাগ্রস্ত করে। ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেয়ার প্রসঙ্গ তুলে তিনি বলেন, অনেকে অনেক সমালোচনা করে। কুইক রেন্টাল কেন দেয়া হলো। হিসাবও বের করে দেয়, এত হাজার কোটি টাকা তাদের দেয়া হয়েছে। কিন্তু সেই দেয়ার মাধ্যমে বাংলাদেশের অর্থনীতি কোথায় গিয়ে দাঁড়িয়েছে? মাথাপিছু আয় বেড়েছে, প্রবৃদ্ধি বেড়েছে। মাঝে মাঝে মনে হয় বিদ্যুৎ বন্ধ করে আমরা ৩ হাজার মেগাওয়াটে ফিরে যাই। তাহলে সমালোচকরা বুঝত কী অবস্থা দাঁড়ায়?
প্রধানমন্ত্রী বলেন, গণমাধ্যমে স্বাধীনতা আছে বলেই বিরোধী দলগুলো বিভিন্ন টেলিভিশন চ্যানেলের টকশোতে গিয়ে ‘যা ইচ্ছা তাই’ বলতে পারছে। তবে আমি মনে করি, সেই সমালোচনা গঠনমূলক হওয়া উচিত। শুধু বলার জন্য বলা না। বিরোধী দল তো বলবেই, তারা সারাদিন কথা বলে, টকশো করে, টকশোতে ইচ্ছামতো বলে যাচ্ছে, যা খুশি তাই বলে যাচ্ছে, কথা বলার পরে বলবে কথা বলার স্বাধীনতা দিই না। স্বাধীনতা ছিল কখন? আইয়ুব খানের আমলে ছিল? জিয়াউর রহমানের আমলে ছিল? এরশাদের আমলে ছিল?
বিএনপির শাসনামলের উদাহরণ টেনে সরকারপ্রধান বলেন, ২০০১ সালের কথা একবার চিন্তা করেন, খালেদা জিয়া যখন প্রথম সরকারে এলো, দক্ষিণাঞ্চলে কি কোনো সাংবাদিক যেতে পেরেছিল? কোনো সাংবাদিক যেতে পারেনি। সেখানে এত অত্যাচার করেছিল। সাংবাদিক নিষিদ্ধ ছিল। তাদের অপকর্ম কোনো পত্রিকা লিখতেই পারত না। যে লিখত, তাকে খেসারত দিতে হতো। তখন স্বাধীনতাটা ছিল কোথায়?
আওয়ামী লীগ সরকারের মেয়াদে সংবাদপত্রের ব্যাপক বিকাশ ঘটেছে মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা সরকার গঠন করার সময় সংবাদপত্র ছিল হাতেগোনা কয়েকটি। তখন অবাধে সংবাদ যাতে প্রকাশিত হতে পারে, সে ব্যবস্থা করেছি। প্রথমে তিনটি প্রাইভেট চ্যানেলের অনুমতি দিয়েছি, তারপর এটি বাড়ানো হয়েছে। সে সময় অনেকে বাধা দিয়েছিল, প্রাইভেটে টিভি চ্যানেল দেয়া ঠিক হবে কিনা? আমি যখনই যে কাজ করেছি সেখানে লক্ষ্য ছিল কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা। তখন আমি বলেছিলাম, যত বেশি টেলিভিশন দিতে পারব, সেখানে সাংবাদিক থেকে শুরু করে বহু ধরনের মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানও একসময় সাংবাদিকতা করেছেন তুলে ধরে বঙ্গবন্ধুকন্যা জানান, সেদিক থেকে তিনি নিজেকে সাংবাদিক পরিবারের একজন বলে মনে করেন। ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে এবং বিপদ-আপদে আকস্মিক সহযোগিতার জন্য ভুক্তভোগী সাংবাদিক পরিবারের পাশে দাঁড়ানোর ভাবনা থেকে কল্যাণ ট্রাস্ট আইন গঠন করে দেয়ার কথাও জানান তিনি।
সাংবাদিকদের আবাসনের বিশেষ প্রকল্পের উদ্যোগ নেয়ার কথা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, অনেককে প্লট দেয়া হয়েছে, আবার অনেকে বিক্রিও করে দিয়েছে। সরকারিভাবে আমরা ফ্ল্যাট তৈরি করেছি, কিছু টাকা জমা দিয়ে, কোনোটা ১৬ বছর, কোনোটা ২৬ বছর ধীরে ধীরে টাকা জমা দিয়ে ফ্ল্যাটের মালিক হওয়া যায়। সেভাবে আমরা অনেক ফ্ল্যাট তৈরি করেছি। সাংবাদিকরা চাইলে আমরা সেটা ব্যবস্থা করতে পারি।
আমি সাংবাদিকদের বলব, তারা যদি ফ্ল্যাট কিনতে চান, সরকারি প্লট যেগুলো আমরা করেছি, আমরা বিক্রি করব। চাকরির অবসরে বেসরকারি চাকরিজীবীদের অনিশ্চিত ভবিষ্যতের কথা তুলে ধরে সরকারপ্রধান রাজনীতিবিদের সঙ্গে সাংবাদিকের জীবনের সাদৃশ্যও তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, কবি, শিল্পী, সাহিত্যিক ও সাংবাদিক তাদের চাকরির কোনো স্থায়িত্ব থাকে না, বয়স্ক বা অসুস্থ হয়ে পড়লে তাদের কোনো সুযোগই থাকে না। সরকারি চাকরিতে অবসর ভাতা পাওয়া যায়। আমাদের রাজনীতিবিদদের জন্য কিছু থাকে না, আবার সাংবাদিকদের জন্য কিছু থাকে না, এটা বাস্তব। এখন গণভবনে আছি ভালো কথা, তারপর কোথায় উঠব? আমি নিজের জন্য চিন্তা করি না, সবার জন্যই ভাবি।
সাংবাদিকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, আমি আপনাদের (সাংবাদিক) বলব- আপনারা যদি কেউ ফ্ল্যাট কিনতে চান, তাহলে কিস্তিতে দেব, সেভাবে আমরা ফ্ল্যাট তৈরি করে দিচ্ছি। যদি নিজেরাই ঘর করতে চান, তাহলে একটা জায়গা নির্দিষ্ট করে দেব।
তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে তথ্য সচিব মো. হুমায়ন কবির খন্দকার বক্তব্য রাখেন। এ সময় বিএফইউজে এবং ডিইউজে, কক্সবাজার সাংবাদিক ইউনিয়ন নেতৃবৃন্দসহ বিভিন্ন সাংবাদিক সংগঠনের নেতারা উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে অসুস্থ, অসচ্ছল ও আহত ৪৩৮ সাংবাদিক ও তাদের পরিবারের সদস্যদের মাঝে প্রায় ৩ কোটি ৪১ লাখ টাকার আর্থিক সহায়তা দেয়া হয়।
Posted ৫:০৪ অপরাহ্ণ | সোমবার, ১০ জুলাই ২০২৩
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta